মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
নিউইয়র্ক স্টেটে অপরাধ বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হচ্ছে ‘নিউইয়র্ক স্টেট বেইল রিফর্ম অ্যাক্ট’ পাস ও কার্যকর করা। ডেমোক্রেট দলীয় নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট মেজরিটি লিডার অ্যান্ডেরা স্টুয়ার্ট কাজিনের নেতৃত্বে ২০১৯ সালে বেইল রিফর্ম অ্যাক্ট পাস ও ২০২০ সালে সেই আইন কার্যকর হয়েছে। যে কারণে নিউইয়র্ক স্টেটে দ্রুত অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বেইল রিফর্ম অ্যাক্ট পাস হওয়ার আগে পুলিশ কোনো অপরাধীকে গ্রেফতার করলে সেই অপরাধীকে বেইল বা জামিন পেতে হলে মোটা অংকের নগদ অর্থ বা বেইল বণ্ড প্রদান করতে হতো। কিন্তু বেইল রিফর্ম অ্যাক্ট পাস হওয়ার পর থেকে পুলিশ কোনো অপরাধীকে গ্রেফতার করার পর থেকে অপরাধীকে কোনো নগদ অর্থ বা বেইল বণ্ড দিতে হয় না।
ফলে একজন অপরাধীকে আটক করার পরদিনই অপরাধী কোনো বেইল বণ্ড ছাড়াই কারাগার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। স্টেটের ফৌজদারি দণ্ডবিধির এই শৈথিল্যের কারণে অপরাধী কারাগার থেকে বের হয়ে পুনরায় অপরাধ কর্মে লিপ্ত হচ্ছে, এমন দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। তারা অপরাধ করছে এবং গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পরই আবার বের হয়ে যাচ্ছে।
সপ্তাহ খানেক আগে এবিসি নিউজ তাদের প্রিন্ট ভার্সনে “বেইল রিফর্ম এন্ড দ্য মার্ডার অফ এ নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ অফিসার” শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে যে, সম্প্রতি এনওয়াইপিডি’র একজন ডিটেকটিভ জনাথন ডিলেরকে এক কৃষ্ণাঙ্গ গুলি করে হত্যা করেছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কুইন্সের ফার রকওয়ে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, যে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি পুলিশ অফিসারকে হত্যা করেছে সেই কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি পুলিশ অফিসারকে হত্যার আগে বিভিন্ন অপরাধে ২১ বার গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু শুধুমাত্র বেইল রিফর্ম অ্যাক্টের অপব্যবহার করে সেই কৃষ্ণাঙ্গ অবশেষে একজন পুলিশ অফিসারের জীবন কেড়ে নিয়েছে।
এবিসি’র প্রতিবেদনে ব্রঙ্কসের একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে যে, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক কেনাবেচায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সম্প্রতি ব্রঙ্কসে ৮ সদস্যের একটি মাইগ্রান্ট গ্রুপকে আটক করে। এই গ্রুপের কারোই সহজে জামিন হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বেইল রিফর্ম অ্যাক্টের ফোকর গলিয়ে গ্রুপটির সকল সদস্য জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়।
নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের সাবেক কশিনার ছিলেন কিস্যান্ট সিওয়েল। সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস কিস্যান্ট সিওয়েলকে পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০২৩ সালে জুন মাসে সিওয়েল পদত্যাগ করেন। তিনি সিটির পুলিশ কমিশনার থাকাকালে সিটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছিল। তার পদত্যাগের পর সমালোচকরা বলেছিলেন যে, সিটির আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতি ও অপরাধ হ্রাস করতে ব্যর্থ হয়েই কিস্যান্ট সিওয়েল পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এ সমালোচনা বাস্তবসম্মত ছিল না।
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, কমিশনার কিস্যান্ট সিওয়েল পদত্যাগ করার পর সিবিএসসহ একাধিক মিডিয়াকে বলেছেন, ‘আমাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। মেয়র চেয়েছিলেন যে তার কর্তৃত্বে পুলিশ প্রশাসন চলবে।’ এছাড়া বেইল রিফর্ম অ্যাক্ট নিয়ে কিস্যান্ট সিওয়েলের সঙ্গে একদিন ম্যানহাটানের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির কথাকাটাকাটিও হয়েছিল।
কারণ নিউইয়র্কে বিধি রয়েছে যে কেউ যদি সামান্য পরিমাণে, অর্থ্যাৎ এক বা দুই পুরিয়া হেরোইন বা কোকেন অথবা অন্য কোনো মাদক বহন করে বা তার সাথে থাকে, তাহলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে না। কিস্যান্ট সিওয়েল অন্য এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে আইন প্রনেতাদের লিবারেল পলিসির কারণে অপরাধীদের গ্রেফতার করা সত্বেও তারা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।
সম্পতি নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ২০২৪ সালে নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়েতে অপরাধ আগের তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সাবওয়েতে নিহত হয়েছে ২৩ জন। বেইল রিফর্ম অ্যাক্ট কার্যকর হওয়ার পর থেকে নিউইয়র্ক সিটিসহ সমগ্র নিউইয়র্ক স্টেটে স্টোর থেকে আগের চেয়ে চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ। ছোট ছোট ফ্রাঞ্চাইজ স্টোরসহ হোলসেল স্টোরগুলোতে চুরি ঠেকাতে স্টোর কর্তৃপক্ষকে অতি সাধারণ একটি টুথপেস্টও শেলফে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখতে হয়, যা অতীতে কখনোই ছিল না।
Posted ১:৫৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh